৮০% রাজনীতির বিপক্ষে মতামত৷
বর্তমানে বাংলাদেশের সব থেকে জনপ্রিয় ব্যক্তি মাশরাফি ,কিন্তু এক দিনের ব্যবধানে তাঁর জন প্রিয়তা এতটাই ধস নামবে হয়ত কল্পনাও করেন নি দেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মর্তুজা।আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। জানা গেছে রোববার তিনি এই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন । এদিকে, নড়াইল-২ আসন থেকে এবার মাশরাফি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার ভক্তরা।
সোশ্যাল মিডিয়া তার ভক্তরা মাশরাফির সমালোচনা করার প্লাটফর্ম বেছে নেন, যে যার যার ইচ্ছে মত কমেন্ট করছেন এমন কমেন্ট ও দেখা যায় তা পড়ার ও উপযুক্ত না।মাশরাফি রাজনীতিতে আসা একটি জরিপ পরিচালনা করা হয় যাতে ৮০% তাঁর রাজনীতিতে আসার বিপক্ষে মত দেন। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া তাকে নিয়ে করা পোস্ট গুলো আগের তুলনায় ৬০% লাইক কমে যায়, যা ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ থেকেই কখনও দেখা যায় নি।
তারকারা তাদের জীবনের সাফল্য হিসেবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাকে ভাবতেই পারেন। সেটা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনি কেন কান্নার ইমো দিয়ে লিখছেন ‘হায় ম্যাশ কেন রাজনীতিতে নাম লেখালে?’ ‘হায় সাকিব কেন এভাবে বিক্রি হয়ে গেলে?’, ‘তোমাদের ভালোবাসতাম, রাজনীতিতে আসার পর আর ভালোবাসি না’! কেন লিখছেন? জাস্ট গো টু হেল ম্যান! শান্ত থাকুন!
সবকিছুতে বিভক্ত হওয়া, বিভ্রান্তি ছড়ানো, নিজের মতামত অন্যের উপরে চালিয়ে দেয়া, গুজব ছড়ানোতে ওস্তাদ যে জাতি তার নাম বাংলাদেশি। তারকারা নির্বাচন করবে; সেটার জন্য রায় দেবে নাকি ভক্তরা! কী আজব! একজন তারকা হয়ে উঠার পেছনে যে সংগ্রাম তার সঙ্গে কী কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকেন কোনো ভক্ত? তারকা নিজেকে সংগ্রাম করে একটি জায়গায় নিয়ে গেলে তারপর তার ভক্ত তৈরি হয়! তার সংগ্রামী গল্প শুনে শুনে, তার সাফল্য দেখে। ভক্তরা তারকার তারকাজীবন, পেশাজীবন নিয়ে মাতামাতি করবে। তার ব্যক্তিজীন নয়। ব্যক্তিজীবনে যদি তিনি অন্যায় করেন, অপরাধ করেন তবে কথা বলুন।
প্রতিটি সফল মানুষই দেশের জন্য অবদান রাখার নানা পথ খুঁজেন। রাজনীতি হতে পারে সেই ভাবনার সেরা একটি পথ। আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিমরা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মাশরাফিসহ অন্যরাও সফল হোক সেই প্রত্যাশা করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিণত বয়সে মাশরাফিকে দেখতে চাই। সেটা দেখা আমার জন্য গর্ববোধের বিষয় হবে।
কথা হলো, ভক্তরা কেন ফেসবুক, হাট-মাঠ কাঁপাচ্ছেন? কেন এই ধরনের স্বস্তা কথা বলা হয় যে তারকারা সার্বজনীন, তার রাজনীতি করা উচিত না? তারকারা অনুকরণীয় বলেই সার্বজনীন। আপনি কী চান না একজন সার্বজনীন মানুষ দেশের চালিকাশক্তির মজবুত একটি পিলার হোক? যদি না চেয়ে থাকেন তবে আপনি ভন্ড। আপনার মনে অন্য কোনো ভাবনা আছে। অথবা হয়তো আপনি আওয়ামী বিরোধী বলেই এটা পছন্দ করছেন না যে তারকারা কেন আওয়ামী লীগে ঢুকছে।একইভাবে অন্য কোনো দলে গেলেও আপনি সমালোচনা করছেন রাজনৈতিক বিপরীত ভাবনা থেকেই। যদি তাই হয় তবে সমালোচনাটা রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার করে করুন। ভক্তের আবেগে ডায়লগ দেবেন না যে তারকাদের রাজনীতি করা ঠিক না। দেশে দেশে তারকাদের রাজনীতির বহু নজির আছে। বহু তারকা ভারতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। শচীনের মতো অহিংস মানুষকেও কংগ্রেস সরকার সংসদ সদস্য বানিয়েছিলো সম্মান জানাতে। একজন তারকা সারা দেশের, সবার। আর যখন নির্বাচনে নামেন তখন তিনি তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি। তাকে নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা ওই এলাকার লোকে করবে। ভক্ত বা আমি আপনি কেন ?
যাক, এবার দুটো কথা বলি। ছড়ানো হচ্ছে সাকিব আল হাসান ও শাকিব খান ভক্তদের আবদারের মুখে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দাঁড়িয়েছেন। শাকিব খানের বেলায় হলেও হতে পারে, তবে সাকিব আল হাসানের বেলায় ব্যাপারটা গুজব। তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই। আওয়ামী লীগ আপাতত সাকিবকে নির্বাচনে চাইছে না। তাই তাকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে আসার পুরোপুরি ইচ্ছে ও প্রস্তুতি দুই ছিলো সাকিব আল হাসানের। প্রধানমন্ত্রীর বিরক্তজনিত কিছু কারণও রয়েছে বলে জানা গেছে।
আমরা নির্ভার থাকি। যার জীবন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে দেই। তারকা আমার। কিন্তু তারকার রাজনৈতিক আদর্শটা তার একান্ত। সেটা আমার সাথে মিলতেও পারে, নাও মিলতে পারে।
সূত্র: ফেইসবুক
No comments