প্রতিদিনের ত্বকের যত্ন
যতই বলি না কেন মেকাপের কথা আসলে ত্বক ভালো না থাকলে সব মেকাপই ব্যর্থ!আর আমাদের দেশের আবহাওয়ায় ধূলো-বালি, গরমের ঘাম সব মিলিয়ে প্রতিদিন রুটিন বেঁধে ত্বকের যত্ন নেয়া খুব জরুরী। স্কিন পরিষ্কার না থাকলেই আসলে সমস্যা বাঁধে ব্রণ, রাশ, Itching নিয়ে। আমরা সবাই-ই কম বেশি ত্বকের যত্ন নেই, কিন্তু সেটা সঠিকভাবে নিচ্ছি কিনা এটা জানা খুব জরুরী। আসুন জেনে নেই প্রতিদিন ত্বককে পরিস্কার রাখার সঠিক পদ্ধতি।
১ম স্টেপঃ ক্লিনজিং
ফেইসওয়াশ – সকালে ঘুম থেকে উঠে বা বাইরে থেকে এসে, প্রথম করণীয় যেটি তা হলো মুখটা ফেইসওয়াশ দিয়ে ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া, এতে ত্বকের উপরে বসে যাওয়া ময়লা গুলো থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। আপনার ত্বকের জন্য সঠিক ফেইসওয়াশ কোনটি এটি বেছে নেওয়া জরু্রী। আপনার স্কিন যদি হয় তৈলাক্ত তাহলে ব্যবহার করুন পন্ডসের ওয়েল কন্ট্রোল ফেইসওয়াশ, এটির মূল্য ১৬০টাকা, ঘুম থেকে একবার আর বাইরে থেকে এসে একবার এভাবে দুইবার এটি ব্যবহার করুন। আর ঘুমানোর আগে ব্যবহার করুন himalayan facewash – নিম /নিম+হলুদ যেকোনটি। এটি আপনার স্কিন পরিষ্কার করার সাথে সাথে এর কিছু হারবাল গুণ আপনার ত্বককে রক্ষা করবে ব্রণ থেকে।যদি আপনার ত্বক হয় ড্রাই তাহলে সকালে আর রাতে ব্যবহার করুন ডোভ এর ময়েশ্চারাইজিং ফেইসওয়াশ, আর বাইরে থেকে এসে ব্যবহার করুন ডোভ এর ডিপ ক্লিন ফেইসওয়াশ।যদি আপনার ত্বক হয় কম্বিনেশন টাইপ তাহলে ব্যবহার করুন পন্ডস হোয়াইট বিউটি বা পিউর হোয়াইট ফেইসওয়াশটি। ফেইসওয়াশ ব্যবহার করে মুখ ঠিক মতো পানি দিয়ে ধোয়াটা খুব জরুরী। অনেক বেশি পরিমাণ পানি দিয়ে বার বার মুখ ধুয়ে ফেলুন যাতে ফেইসওয়াশের কণা পরিমাণ-ও ত্বকে লেগে না থাকে। যদি আপনার স্কিনে পিম্পলের সমস্যা থাকে তাহলে দিনে একবার যেসব জায়গায় পিম্পল আছে সেখানে নিউট্রোজিনা একনে ওয়াশ বা একনে বার সাবান ব্যবহার করতে পারেন।
স্ক্রাব – দিনে একবার করে সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করুন একটি স্ক্রাব । এটি আপনার ত্বককে ডিপ ক্লিন করবে , ত্বকের এপিডার্মাল লেয়ারের মৃত কোষ গুলো তুলে ফেলবে, স্কিনের কালো ভাব কমাবে, রোদে পোড়া ভাব কমাবে (তবে অত্যধিক রোদে পোড়া ত্বকে ভুলেও স্ক্রাব ব্যবহার করবেন না)।স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন ক্লিন এন্ড ক্লিয়ারের ব্ল্যাকহেড রিমুভার, বা ST. Ives এর এপ্রিকট স্ক্রাব। (বাসায় বানানো একটি অসাধারণ স্ক্রাবের পোস্টের জন্য অপেক্ষা করুন )।
২য় স্টেপঃ
টোনার – ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুখের পানি শুকিয়ে ফেলতে হবে। এব্রপর ব্যবহার করুন একটি টোনার। আমরা অনেকেই টোনার ব্যবহার করি না, ভাবি এটা জরুরী না, কিন্তু আপনি একবার টোনার ব্যবহার করলেই বুঝবেন টোনার কেন জরুরী। ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিস্কার করে সাথে সাথেই তুলায় লাগিয়ে টোনার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন, দেখবেন তুলো ভর্তি কালো ময়লা উঠে আসছে।টোনার আসলে ফেইসওয়াশের কোন কণা রয়ে গেলে সেটি যেমন পরিষ্কার করে তেমনি পরিষ্কার করে ত্বকের রোমকুপে লুকিয়ে থাকা অতিরিক্ত তেল/ময়লা। তাই বিশেষ করে কম্বিনেশন স্কিন আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি খুব জরুরী।২৩০ টাকায় পাবেন ক্লিন এন্ড ক্লিয়ারের ওয়েল কন্ট্রোল টোনার। আর যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা ব্যবহার করতে পারেন টোনারের বদলে এস্ট্রিনজেন। টোনার ব্যবহারের পর অনেকে ধুয়ে ফেলেন মুখ পানি দিয়ে, অনেকে রেখে দেন। কোনটাতেই ক্ষতি নেই।
৩য় স্টেপঃ
ময়েশ্চারাইজার -ময়েশাচারাইজারের ব্যাপারে আমাদের একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো তৈলাক্ত ত্বকে ক্রিম লাগাতে হয় না। খুব ভুল ধারণা। আপনার ত্বকের ধরণ যেমন-ই হোক , সেনসিটিভ, তৈলাক্ত, ব্রণের সমস্যা,ড্রাই, বা ধরুন একদম পারফেক্ট নরমাল- যেমনই হোক সেই টাইপ অনুযায়ী সঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরী। নাহলে স্কিন তার প্রয়োজনীয় পানি আর অন্যান্য উপাদানের অভাবে হয়ে পড়বে রাফ, ব্রাইটনেস কমে যাবে, কমে যাবে স্বাস্থ্যকর ঔজ্জল্য। যাদের স্কিন অয়েলি তাদের জন্য আছে অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার, মুখ ক্লিনের পর স্কিনের কোমল ভাব রক্ষার জন্য অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিবেন। ড্রাই স্কিনের জন্য একটু ভারী ধরণের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যেমন – জনসনের মিল্ক ময়েশ্চারাইজার বা নেভিয়া ক্রিম।
ফেইস মাস্কঃ সপ্তাহে একবার একটা ফেইস মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ,যেটা ত্বক কে নানাভাবে পুরো সপ্তাহের ঝক্কি ঝামেলা থেকে নোরিশড করতে সাহায্য করবে। ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন রকম মাস্ক। আজকাল ক্লে মাস্ক খুব জনপ্রিয় হয়েছে , ফ্রিম্যানের ক্লে মাস্ক পাবেন ৫০০ টাকায়। আছে হেলদি শপের বা বডি শপের বিভিন্ন মাস্ক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। কিংবা ব্যবহার করতে পারেন হারবাল মাস্ক যেমন shomi’s এর গ্লো একটিভ, গ্লো শাইন।বা আয়ুরের কিউকাম্বার মাস্ক।
নাইট ক্রিমঃ রাতে গড়ে আট ঘন্টা ঘুমানো হয়। এই পুরো সময়টা যদি স্কিন বাতাসে খোলা ফেলে রাখি তাহলে স্কিন যেমন সকালে উঠে ড্রাই হয়ে থাকবে তেমনি, আট ঘন্টায় বাতাসে ধূলি কণা ত্বকে পড়ে সহজেই শুরু হয়ে যাবে ব্রণের প্রকোপ। তাই ত্বকের যত্নে নাইট ক্রিম একটি জরুরী ব্যাপার। একটি ভালো নাইট ক্রিমের ব্যবহার আপনাকে স্কিনের সমস্যা থেকে ৫০% রেহাই দিতে পারে। একটানা আট ঘন্টা কাজ করার সময় পায় এই ক্রিম, তাই নাইট ক্রিম বেছে নেওয়ার ব্যাপারে একটু বিলাসী হোন যদি ত্বককে সঠিক উপায়ে পরিচর্যা করতে চান। ৫০০ টাকার মধ্যে পাবেন olay even tone natural white night cream. এটি মূলত কম্বিনেশন স্কিনের জন্য ভালো। অয়েলি স্কিনের জন্য ব্যবহার করুন বডি শপের ভিটামিন ই।যদি বাজেট করতে পারেন ৩০০০ তাহলে ব্যবহার করুন philosophy brand এর hope in a jar. জানি একটা ক্রিমের পিছনে ৩০০০ টাকা খরচ করাটা পাগলামি মনে হতে পারে, কিন্তু ঐ যে বললাম, আর সব বাদ দিয়ে এই নাইট ক্রিমের ব্যাপারে বিলাসী হোন, আপনার investment বৃথা যাবে না!
আশা করি আর্টিক্যালটি আপনাদের ভালো লাগবে, যেকোন জিজ্ঞাসা জানাতে পারেন কমেন্ট সেকশনে। শুভকামনা আপনার এবং আপনার ত্বকের জন্য!
No comments